নারী ও শিশুর অধিকার আদায় ও নির্যাতন রোধে কাজ করছে সরকারের ১০ হেলপলাইন। এর মধ্যে নারী ও শিশুর জন্য টোল-ফ্রি ১০৯ ও শুধু শিশু অধিকার আদায়ে হেলপলাইন ১০৯৮ এবং জরুরি সেবা দেওয়ার জন্য পুলিশ পরিচালিত হেলপলাইন ৯৯৯ ব্যবহার করেও সেবা পাচ্ছে নারী ও শিশুরা।
প্রতিদিন সাড়ে ৪ হাজার থেকে ৫ হাজারেরও বেশি ফোনকল আসছে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের হেলপলাইনে। এই কল পাওয়ার পর তৎক্ষণাৎ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয় বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। ২০১২ সালে ডিসেম্বরে চালু হওয়া এই হেলপলাইনের মাধ্যমে এ যাবত ৯ হাজার ৬৫৪ বাল্যবিবাহ বন্ধ করা হয়েছে। এ সময় ১২ হাজার ৭৪৩টি বাল্যবিবাহসংক্রান্ত ফোনকল গ্রহণ করা হয়। ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে বাংলাদেশ পুলিশ পরিচালিত জরুরি সেবা প্রদানের জন্য ৯৯৯ যাত্রা শুরু করে। টোল-ফ্রি এই নম্বরে শিশু বিষয়ক ৮ লাখ ৫৪ হাজার ৬১৯ এবং নারীসংক্রান্ত ৩ লাখ ২৭ হাজার ৩৭ কল গ্রহণ করা হয়। নারী ও শিশু নির্যাতনসংক্রান্ত ৩৯ হাজার ৩১টি ফোনকল আসে।
মিরপুর বাউনিয়াবাদের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী রিনতি আক্তার তাবাসসুম জুলাই মাসের মাঝামাঝি সময়ে নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী জেরিনকে বাল্যবিবাহের হাত থেকে বাঁচাতে ১০৯৮-এ ফোন করে। তখন পুলিশ এসে জেরিনের বিয়ে বন্ধ করে। এ পর্যন্ত সে বেশ কয়েকটি হেলপলাইনে ফোন করে বাল্যবিবাহ বন্ধ করে। তাবাসসুম ব্রেকিং দ্যা সাইলেন্স থেকে বাল্যবিবাহ রোধ, জরুরি সেবা ও নির্যাতন রোধের হেলপলাইন সম্পর্কে জানতে পারেন।
নিজের মেয়েকে হত্যা করতে এক মা তার গায়ে আগুন দেওয়ার জন্য এক গ্যালন কেরোসিন ঢেলে দেয়। উপায়ন্তর না দেখে মিরপুর রহমত ক্যাম্পের সাবিহা আক্তার ৯৯৯ ফোন করে। পুলিশ এসে রক্ষা করে ১১ বছরের মেয়েকে। পরে মেয়েটির দায়িত্ব নেন তার নানি।
ব্রেকিং দ্যা সাইলেন্স-এর পরিকল্পনা পরিচালক মো. জাহিদুল ইসলাম ইত্তেফাককে বলেন, আমরা কর্ম এলাকায় বাল্যবিবাহের জন্য ১০৯৮, নারী নির্যাতনের ১০৯ এবং জরুরি সেবার জন্য ৯৯৯-এর কল করার কথা বলি। আমাদের অভিজ্ঞতা বলে হেলপলাইনগুলোতে কল করলে অনেক সময় কাজ হয়। কিছু কিছু সময় সেবা পেতে সময় লাগে, সেবাও পাওয়া যায় না এমনও হয়, তবে তার সংখ্যা কম। আবার হেলপলাইনে পরিচয় গোপন করে কল করার বিধান থাকলেও তথ্য যাচাইয়ের জন্য বার বার প্রশ্ন করে এই বিধান অগ্রাহ্য করা হয়।
মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মালটিসেক্ট্র্ররাল প্রকল্পের অধীনে ১০৯-এ চলতি বছর আগস্ট পর্যন্ত ৫৫ লাখ ৩ হাজার ৬৯২ কল আসে। ৩ লাখ ৪৬ হাজার ৪৫০টি ফোনকল গ্রহণ করা হয়।
মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় চালিত ১০৯ হেলপলাইন ইনচার্জ-রাইসুল ইসলামের তথ্য মতে প্রতিদিন তারা সাড়ে ৪ হাজার থেকে সাড়ে ৫ হাজার ফোনকল গ্রহণ করেন। এর মধ্যে ৪০০ থেকে ৫০০ ফোন কল প্রকৃত সেবা গ্রহণের জন্য। বাকিগুলো ভুয়া।
মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব ও মালটিসেক্ট্ররাল প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক নার্গিস খানম ইত্তেফাককে বলেন, বিশাল অঙ্কের কলের মধ্যে সত্যতা নির্ধারণ করা আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জ। কল এলে ঐ এলাকার পুলিশ, ইউএনওর সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যমে কাজ করা হয়। আমাদের লোকবলের অভাব আছে। আবার প্রকল্পটিও ২০২৩ সালের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে। মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের শিশু ও সমন্বয় উইং প্রধান অতিরিক্ত সচিব মো. মহিবুজ্জামান ইত্তেফাককে বলেন, মেয়ে শিশুদের ক্ষেত্রে বেশি কল আসে বাল্যবিবাহসংক্রান্ত। আমরা এটা বন্ধের জন্য নানা রকম পরিকল্পনা করছি।